একদা এক বালক এক বড় ধরনের অপরাধ করে ফেলেছিল। তাই তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রাজার সিপাহীরা তাকে রাজার কাছে নিয়ে গেল।
সিপাহী- মহারাজ, এই বালক বড় ধরনের অপরাধ করেছে।
বালক- মহারাজ, আপনি যা বলবেন তাই করব। দয়া করে আমাকে শাস্তি দেবেন না। আমি ভুলবসত অপরাধ করে ফেলেছি।

রাজা- আমি যা বলব তুমি তাই করবে?
বালক- হ্যাঁ, মহারাজ।
রাজ্যের পাশের জঙ্গলের মাঝে একটি উপত্যকা আছে। সেই উপত্যকার ঠিক মাঝখানে একটি পাথুর গুহা আছে। সেই পাথুরে গুহার পথ ধরে হাঠতে থাকলে কিছুক্ষন পর গুহা শেষ হয়ে যাবে। গুহাটি পর একটি রুপকথার গল্প এর মত একটি সুন্দর বাগান রয়েছে। বাগানের এপাশে নদী আছে। তাকে এই নদী সাঁতরে পার হতে হবে।
মন্ত্রী তাকে এই নদীতে কুমির আছে বলে সাবধান করলো।
নদী পার হয়ে বাগানে পৌঁছে গেলে, সেখানে লাল রঙের এক ধরনের ফল রয়েছে। এইরকম লাল রঙের ফল বাগানে কেবলমাত্র একটিই রয়েছে। রাজা তাকে সেই লাল ফল তার জন্য এনে দিতে বললেন।
এই বাগানের অন্য রঙের ফল সে ছিরতে পারবে না। অন্য ফল ছিরলে সেই ফলের বিষে সে আর জীবিত থাকবে না।
তবে সে নদীর পানি খেতে পারবে। সেখানে যাওয়ার পথে অনেক বিপদ বলে তিনি বালকটিকে সাবধান করলেন। ফল আনতে পারলে তিনি তাকে উপযুক্ত পুরুস্কার দিবে বলে আশ্বাস দিলেন।
রাজা- তুমি কি ফল গুলো আমাকে এনে দিতে পারবে?
বালক- আমি আপনাকে লাল রঙের ফল এনে দিতে পারব। তবে আমার একটি ঘোড়া লাগবে।
বালকটি রাজার থেকে আরো কিছু চাইল। রাজা মন্ত্রীকে বালকটি যা চাইছে তা দিয়ে দিতে বলল। মন্ত্রী রাজার কথামতো বালকটিকে সকল জিনিসপ্ত্র ও একটি ঘোড়া দিলো। বালকটি রওনা হয়ার পূর্বে কয়েকদিন বাসায় থাকল।
কয়েকদিন পর সে বাগানের উদ্দেশ্য রওনা হলো। ঘোড়ায় চড়ে সে কোনোরকম বিপদ ছাড়াই রাজ্যের পাশের বনের কাছে পৌছে গেল। বনে পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেছে। সে তখন সেই রাত্রের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় খুজছিল। জঙ্গলের ভিতর সে দেখল দূর থেকে আগুন জ্বলার আলো আসছে।
সেই আলো ধরে এগোতে এগোতে সে একটি পুরোনো কুঁড়েঘরের সামনে এসে পরল।
এই গহীন জঙ্গলে কুঁড়েঘর আসল কোথা থেকে। কেউ কি আছেন? বালকটি জিজ্ঞেস করল।

কিছুক্ষন পর কুঁড়েঘর থেকে এক বৃদ্ধ বুড়ি বেরিয়ে এল। বুড়িকে দেখে বালকটি কিছুটা আশ্বস্ত হল।
আমি অনেক দূরদেশ থেকে এসেছি। আমাকে যদি আজকে রাতের জন্য আশ্রয় দেন তাহলে ভালো হয়। বালকটি বুড়িকে বলল।

বালকটি ভিতরে প্রবেশ করে দেখল ঘরটি বেশ পুরনো। ঘরটির এককোনায় একটি বড়সড় মাদুর পাতা। তাকে বুড়ী মাদুরে বসতে বলল।
সে মাদুরে বসে বুড়িকে জিজ্ঞাস করল- আপনি এই গহীন জঙ্গলে একা থাকেন কেন? আপনার কি কেউ নেই?
বুড়ি তখন তাকে নিজের কাহিনি বলল।
অনেক বছর আগে, আমি স্বামী ও একমাত্র ছেলের সাথে গ্রামে একসাথে বাস করতাম। একদিন রাজা আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে একটি লাল ফল আনতে বলল। সে যেতে চাইল না। কিন্তু রাজা তাকে হুকুম দিল যে সে ঐ ফল না আনলে তাদের সবাইকে রাজ্যছারা করবে।
আমার ছেলেও তার সাথে গেল। আমি কতবার যেতে না বললাম । কিন্তু সে তার বাবার সাথে যাবেই। তারা দুজন ফল আনার উদ্দেশ্যে চলে গেল। তারা আজও ফিরে এল না।

সে এখন সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। তার মধ্যে একধরনের দ্বিধা কাজ করল। সে কি ফিরে যাবে?
সে দেখল সামনে তার সামনে আর পথ নেই। এতে সে কিছুটা বিচলিত হল। সে কি পথ হারিয়ে ফেলেছে? আকাশও অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।
সে বুঝল যে, আজ আর চলা যাবে না। সে আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা খুঁজতে লাগল। কিন্তু সে আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মত কোনো জায়গা খুঁজে পেল না।
আকাশে ক্রমাগত মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। পরিবেশটাও কেমন জানি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় তুফান শুরু হয়ে যেতে পারে। তাকে তাড়াতাড়ি কোনো আশ্রয় খুঁজে বের করতে হবে। সে তার পাশের একটা গাছে সে রাতটার জন্য আশ্রয় নিল।

পরেরদিন সকালে সে উঠার পর দেখে তুফানের ঝাপটায় জঙ্গলটা প্রায় তছনছ হয়ে গেছে। অনেক গাছ ভেঙে পরেছে। চারদিকে গাছের পাতা ও পানি মিশে একাকার। ঝড়ও এখন এ আর নেই।
সে আবার চলা শুরু করল। তাকে এবার পথ খুজে পেতে বেশি কষ্ট করতে হলো না। কয়েক ঘন্টা চলার পর জঙ্গলের শেষ প্রান্তে এসে পৌছাল।

উপত্যকা বেশি দূরে নয়। দেখে ৫ মিনিটের পথ মনে হলো তার। সে হাঁটতে লাগল । এই উপত্যকটা বালুময় মরুভূমির মতো। রোদে সে আরো ক্লান্ত হয়ে গেল। তবুও সে হাঁটা থামাল না।
প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পরও সে উপত্যকার মাঝের গুহার কাছে পৌছল না। সে দেখল যে, সে আগের জায়গাতেই রয়েছে। ঠিক যেখানে সে ১০ মিনিট আগে ছিল! সে কিছুটা আশ্চর্যান্বিত হলো। সে ভাবল, এ কিভাবে সম্ভব? কিছুক্ষন আগেই তো সে এই জায়গায় ছিল।

তার হঠাতই এক কথা মনে পরল। সে তো আসার সময় বড় রশি নিয়ে এসেছে। এই রশি নিয়ে তার মাথায় এক বুদ্ধি এল।

সে রশি অনুসরণ করে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষন পর সে গুহার কাছে পৌছে গেল। সে গুহার ভিতরে প্রবেশ করল। গুহার ভিতরে সে কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম নিল।
তার পর সে গুহার পথ ধরে হাটতে লাগল । অন্ধকারে গুহার ভিতরটা ভালোমতো দেখা যাচ্ছে না। সে যতই এগোতে লাগল, ততই গুহা অন্ধকারচ্ছন্ন হতে লাগল। এই আবছা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে কিছুদূর হাটার পর সে তার সামনে দুইটা পথ দেখতে পেল।
অন্ধকারের জন্য পথ দুইটা ভালোমতো দেখা যাচ্ছে না। সে ভেবে পেল না, তার কোন পথ দিয়ে যাওয়া উচিত। পথ ২টি দেখতে একই রকম। পথ দুইটার সামনে কোনো চিহ্ন বা সংকেত নেই। কোনো সংকেত থাকলে সে হয়তো সঠিক পথটি চিনতে পারত।
সে তার সামনের অজানা বিপদের কথা ভেবে ঘাবরে গেল। রুপকথার গল্পের মতো ভুল পথে গেলে তার সাথে কি খারাপ কিছু ঘটতে পারে। সে এসবই চিন্তা করতে লাগল।
তার ঘাড় বেয়ে ঘাম পরতে লাগল। এমন মুহূর্তে মাঝে মাঝেই সে কোনো না কোনো উপায় বের করে ফেলে। এমন সময় তার মাথায় এক বুদ্ধি এল।
সে তার হাতের মশালটি বাঁ পাশের গুহার দিকে ছুড়ে ফেলল। মশালটি হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল। তখন সে বুঝতে পারল সে কোনো এক রুপকথার মজার গল্প এর জাদুর নগরীতে এসে পরেছে। সে বুঝে ফেললে ডান দিকের পথটিই সঠিক পথ। সে ডান দিকের গুহা ধরে চলতে লাগল।
চার পাশটা অনেক অন্ধকার। মশাল না থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবুও সে অন্ধকারের ভিতর তা পথ আদাজ করে চলতে লাগল।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর সে অল্প আলোর ঝলক দেখতে পেল। সে আলো লক্ষ্য করে আরও দ্রুত চলতে লাগল। আলোও ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। একসময় সে গুহার বাইরে চলে এল।
গুহার ওপর পাশে অনেক সুন্দর একট ঝরনা। সে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। সে ঝর্ণার পাশে এসে বসল। সে ঝর্না থেকে পানি খেল। পানি খাওয়ার পর তার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।
সে বুঝতে পারল যে, ঝরনাটি কোনো সাধারণ ঝরনা নয়। এটি হলো জাদুর ঝরনা। সে ঝরনার পানিতে গোসল করে।
সে গোসল করার পর পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে নিজেকেই চিনতে পারল না। সে আগের তুলনায় অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছে। তাকে রাজকুমারের মত দেখাছে।
এখন প্রায় রাত হয়ে গেছে। সে রাতটা ঝরনার পাশেই কাটাবে বলে ঠিক করলো। সে রাতটা তার ভালোমতোই কাটল। পরদিন ভোরে উঠে সে চলা শুরু করল।
কিছুক্ষন হাঁটার পর সে এক নদীর পাড়ে এসে পোঁছেল। নদীটা বেশি প্রশস্ত নয়। নদীর ওপারে রুপকথার ছোট গল্প এর বাগান দেখা যাচ্ছে। বালকের মন খুশিতে ভরে উঠল। তার এতদিনের কষ্ট সার্থক হয়েছে।
তবে তার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটি এখনও বাকি রয়েছে। নদীতে রয়েছে বড় বড় ক্ষুধার্থ কুমির। সে কুমিরগুলোকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। তবে কিছুক্ষণ পরে সে নিজেকে ঠিক করে নি। আবার আগের মতো সাহসী হয়ে গেল।
সে ভাবতে লাগল, কিভাবে নদীটি পার হওয়া যায়। কিভাবে ওপারে পৌছা যায়? সে অনেক চিন্তা করার পরও কোনো উপার খুঁজে পেল না।
হটাত নদী হতে এক জলপরী উঠে এল। জলপরীকে দেখে বালুকটি খানিকটা বিস্মিত হন। জলপরী বালকটি সম্পর্কে সব জানে, সে এও জানে কী উদ্দেশ্যে বালকটি এই রূপকথার বাগানে এসেছে।
জলপরী বালকটিকে বলল- তুমি যদি চোখ বন্ধ করে নদীর উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করো, তাহলে তুমি চোখ খুলে দেখাবে নদীর অপর পাড়ে পৌঁছে গেছ। তবে কোনো ভয় পাওয়া চলবে না। ভয় পেলে অথবা চোখ খুললেই কুমিরগুলো তোমাকে আক্রমন করবে। তোমাকে সাহসী থাকতে হবে। এই নদী অগভীর। তুমি সহজই পাড় হতে পারবে। তোমার মতো অনেকেই এখানে এসে নদী পার হতে পারনি।
এসব বলার পর হঠাৎ করেই জলপরী চলে গেল। বালকটি চার পাশে তাকিয়ে তাকে খুঁজল, তবে খুঁজে পেল না।
সে চোখ বন্ধ করে নদীতে নামল। সে থামছে না। তবুও সে ভয় পাচ্ছে না। তার পাশ দিয়ে কুমির সাঁতার কেটে যাচ্ছে। সে নদীর প্রায় মাঝখানে এসে পরেছে।
তার বুকমান পানি। একটা কুমির তাকে ধাক্কা দিল। সে পানিতে পরে গেল। সে জলপরীর কথামতো ভয় পেল না। কুমিরটা তার পাশ দিয়ে চলে গেল। তার কোনো ক্ষতি করল না।
সে নদীর পাড়ের কাছাকাছি এসে পরেছে। সে নদী থেকে পাড়ে উঠল। তার সামনেই রূপকথার বাগান। সে সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। তার সেদিকে খেয়াল নেই।





মন্ত্রী তাকে বলেছিল- ভুল ফল ছিরলে সে মারা যাবে। সে ভীষণ চিন্তায় পরে গেল। এমন এময় এক অপূর্ব সুন্দরী পরী তার কাছে আসলো।
অবিরত করা হবে.....

0 comments:
Post a Comment